Reading Time: 14 minutes

স্বাস্থ্য বীমা সম্পর্কে জানার আগে চলুন বীমা সম্পর্কে কিছু সাধারণ ধারণা নিয়ে নিই। 

বীমা বা ইনস্যুরেন্স হচ্ছে একধরণের আর্থিক সেবা (ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) যেটি আপনাকে ব্যক্তিগত জীবনের বা ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বিভিন্ন ঝুঁকির বিপরীতে সুরক্ষা দেয়। এই ঝুঁকি হতে পারে আকস্মিক অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, আগুন লাগা, বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষয়-ক্ষতি, ইত্যাদি। এসকল ঝুঁকির কারণে আপনাকে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে এবং বীমা বা ইনস্যুরেন্স এর মাধ্যমে আপনার কোনো ক্ষতি হলে তার বিপরীতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়। বীমা চুক্তি বা ইনস্যুরেন্স পলিসিতে সুরক্ষিত ঝুঁকির কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হলে বীমাকারী বা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি আর্থিক সুবিধা প্রদান করে। 

আরো সহজ ভাবে বলা যায়, বীমা বা ইনস্যুরেন্স হচ্ছে বীমা কোম্পানি এবং আপনার মধ্যে একটি চুক্তি যার মাধ্যমে আপনি কিছু নির্দিষ্ট ঝুঁকির কারণে সৃষ্ট ক্ষতির জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন।  বীমা চুক্তিকে সাধারণ ভাবে “বীমা পলিসি” (ইনস্যুরেন্স পলিসি) বলা হয় এবং যেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বীমা পলিসি গ্রহণ করে তাকে “বীমা গ্রহীতা” বলা হয়। 

স্বাস্থ্য বীমা কি?

স্বাস্থ্য বীমা একধরণের বীমা পলিসি যার মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত অসুস্থতা, রোগ, বা দুর্ঘটনার চিকিৎসার বিপরীতে আর্থিক সহায়তা বা ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। তার মানে দাঁড়ায়, স্বাস্থ্য বীমাগ্রহীতা তার চিকিৎসা ব্যয়ের বিপরীতে নির্দিষ্ট আর্থিক সুবিধা বা খরচকৃত অর্থ ফেরত পায়; যা বীমা পলিসি দ্বারা নির্ধারিত থাকে। 

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বীমার ব্যবহার এখনো খুব বেশি পরিমানে নেই কারণ অধিকাংশ বীমা কোম্পানি ব্যক্তিগত পর্যায়ে স্বাস্থ্য বীমা পলিসি প্রদান করে না। যদিও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য গ্ৰুপ স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা পলিসি নিয়ে থাকে কিন্তু, এর মাধ্যমে খুব বেশি মানুষ বীমা সুরক্ষা পায় না। এই কারণে, সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য বীমা সুরক্ষা পাওয়া এখনো বেশ কঠিন। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য বিমাফাই বিভিন্ন স্বনামধন্য ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সাথে কাজ করছে যাতে বাংলাদেশের মানুষ সহজে স্বাস্থ্য বীমা পলিসি বুঝতে এবং কিনতে পারে। বিমাফাই প্লাটফর্ম থেকে আপনি আপনার প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী স্বাস্থ্য বীমা পলিসি বেছে নিতে পারবেন। 

কেন সবার স্বাস্থ্য বীমা থাকা উচিত?

সবারই স্বাস্থ্য বীমা থাকা উচিত, কারণ এর অনেকগুলো উপকারিতা আছে, যার কয়েকটি নিচে দেওয়া হল:

১. অনাকাঙ্খিত অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার বিপরীতে স্বাস্থ্য বীমা অর্থিক সুরক্ষা দেয় যার ফলে আপনি যেকোনো বিপদের মুহূর্তে আর্থিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে পারেন

**২. স্বাস্থ্য বীমা করা থাকলে আপনি উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারেন কারণ স্বাস্থ্য বীমা আপনাকে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করছে **

৩. স্বাস্থ্য বীমা করা থাকলে আপনাকে চিকিৎসা ব্যয় করার জন্য সঞ্চিত অর্থ খরচ করে ফেলতে হয় না, এবং আপনি থাকতে পারেন নিশ্চিন্ত

স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে আপনি খুব অল্প পরিমান প্রিমিয়াম এর বিনিময়ে বড় অংকের আর্থিক সুরক্ষা নিতে পারেন, তাই আপনার চিকিৎসা ব্যয় এর পরিমান কমে যায় কারণ বীমা দাবির মাধ্যমে আপনি খরচকৃত অর্থ ফেরত বা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। 

বাংলাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য বীমা পলিসির ধরণ ও বিস্তারিত

যদিও বাংলাদেশে ব্যক্তি পর্যায়ে খুব বেশি যুগোপযোগী স্বাস্থ্য বীমা পাওয়া যায় না, তার পরেও যেই ধরণের পলিসি গুলো প্রচলিত আছে তার বর্ণনা নিচে দেওয়া হল:

১. হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত স্বাস্থ্য বীমা পলিসি হচ্ছে হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য নিয়ে থাকে। এই ধরণের পলিসিগুলোতে সাধারণত একটি বাৎসরিক মোট বীমা অংক (সর্বমোট কভারেজ) নির্ধারণ করা থাকে এবং বীমাগ্রহীতা হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়ের বিপরীতে এই অংক পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ ফেরত পায়। মাঝে মাঝে এই পলিসিগুলোতে জীবন বীমা এবং  বহির্বিভাগের চিকিৎসা (যেমন আউটডোর ভিসিট, টেস্ট, ইত্যাদি) কভারেজ যুক্ত থাকে যাতে আপনার সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।

যেমন ধরুন, আপনার একটি হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি আছে যাতে সর্বমোট ৫০,০০০ টাকার বাৎসরিক বীমা কভারেজ আছে। হঠাৎ আপনার অকস্মাৎ অসুস্থতায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ৩৫,০০০ টাকা খরচ হয়ে গেল। এই ক্ষেত্রে আপনি বীমা দাবি করে ৩৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ফেরত পেতে পারেন। কিছু কিছু চিকিৎসা ব্যয় পলিসিতে কভার নাও করতে পারে (যেমন: ডিসপোসেবল আইটেম, ভিসিটরের খাবার ইত্যাদি); সেক্ষেত্রে ওই খরচগুলো বীমা কোম্পানি প্রদান করবে না। সেজন্য, যেকোনো স্বাস্থ্য বিমা পলিসি নেওয়ার আগে, তার শর্ত সমূহ জেনে নেওয়া উত্তম।

এখানে একটা বিষয় জেনে রাখা জরুরি যে, বীমা দাবি (ইনস্যুরেন্স ক্লেইম) উত্থাপন করা হলে দাবিটি আপনার চিকিৎসা ব্যয়ের খরচের উপরে নিস্পত্তি করা হবে। তাই চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র এবং বিল সমূহ যত্ন সহকারে সংগ্রহ করে বীমা দাবির সাথে প্রদান করতে হবে। 

২. হাসপাতাল ক্যাশ পলিসি

হাসপাতাল ক্যাশ (হসপিক্যাশ) আরেকটু সহজ ধরণের স্বাস্থ্য বীমা পলিসি যার মাধ্যমে বীমা গ্রহীতা হাসপাতালে চিকিৎসার বিপরীতে দৈনিক ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ ক্ষতিপূরণ পান। এই ধরণের পলিসিতে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় কত টাকা হয়েছে সেটার বিপরীতে বীমা দাবি নিস্পত্তি করা হয় না। তার বদলে, কত দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তার বিপরীতে প্রতিদিনের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। প্রায়শই এই ধরণের পলিসিগুলোর সাথে জীবন বীমা ও বহির্বিভাগের চিকিৎসা ব্যয়ের কভারেজ থাকে এবং এই ধরণের পলিসিগুলোর প্রিমিয়ামও তুলনামূলকভাবে কম হয়। 

যেমন ধরুন, আপনার হাসপাতাল ক্যাশ পলিসিতে হাসপাতালে উপযুক্ত কারণে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রতিদিন ৩,০০০ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় এবং হঠাৎ আপনার অসুস্থতার কারণে ৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হল। এই ক্ষেত্রে, আপনার হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় যত টাকাই হোক না কেন, আপনি সর্বোচ্চ ৯,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন।

এই ধরণের পলিসিগুলোতে সাধারণত কিছু সুনির্দিষ্ট রোগের কভারেজ থাকে না এবং বীমা দাবি করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু দিন অপেক্ষা করতে হয়। তাই, স্বাস্থ্য বীমা পলিসি করার আগে এই বিষয় গুলো লক্ষ্য করা উত্তম। 

আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার যে, যদিও হাসপাতাল ক্যাশ পলিসিতে বীমা দাবির সময় চিকিৎসা খরচ কত হয়েছে সেটি দেখা হয় না, তারপরেও চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র এবং বিল সমূহ যত্ন সহকারে সংগ্রহ করতে হয় কারণ আপনার দাবিটি নিরীক্ষা করতে এগুলো প্রয়োজন হবে।

৩. দুরারোগ্য ব্যাধির পলিসি

গুরুতর ব্যাধির পলিসি গুলোতে সাধারণত কিছু সুনির্দিষ্ট দুরারোগ্য রোগের জন্য (যেমন ক্যান্সার, হার্ট এটাক, স্ট্রোক, করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, ইত্যাদি)  এককালীন বড় অংকের আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়। পলিসি ভেদে এই টাকার অংক রোগ নির্ণয় হলে নির্দিষ্ট পরিমানে পাওয়া যেতে পারে, আবার চিকিৎসা খরচের বিপরীতে ফেরত প্রদানের নিয়মেও হতে পারে। যেহেতু এই স্বাস্থ্য বীমা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু গুরুতর ব্যাধির জন্য কাজ করে, তাই এটিকে গুরুতর ব্যাধির (ক্রিটিকাল ইলনেস) পলিসি বলা হয়। এই ধরণের পলিসির প্রিমিয়াম সাধারণত খুব কম হয় এবং অনেক সময়ই এটা আপনার জন্য বিশাল উপকারী হতে পারে। 

মাঝে মাঝে দুরারোগ্য ব্যাধির কভারেজটি হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি বা হাসপাতাল ক্যাশ পলিসির সাথে যুক্ত থাকে যেন আপনি একটি পলিসিতেই সব ধরণের কভারেজ পেয়ে যান। অন্যথায়, আপনি চাইলে অন্য স্বাস্থ্য বীমার সাথে দুরারোগ্য ব্যাধির একটি আলাদা পলিসি করে রাখতে পারেন যাতে জরুরি মুহূর্তে আপনি আর্থিক ভাবে প্রস্তুত থাকেন।

স্বাস্থ্য বীমা করার জন্য বিমফাই কেন সেরা প্লাটফর্ম?

Bimafy (বিমাফাই – bimafy.com) বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ইনস্যুরেন্স মার্কেটপ্লেস, যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই আপনার প্রয়োজনীয় ইনস্যুরেন্স পলিসি অর্ডার করতে পারবেন এবং অনলাইনেই ইনস্যুরেন্স ক্লেইম জমা দিতে পারবেন। বিমাফাই কোনো ইনস্যুরেন্স কোম্পানি নয়, এটি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ইনস্যুরেন্স কোম্পানির প্রদত্ত বীমা সেবা গুলো অনলাইনে নিতে পারেন। বাংলাদেশের মানুষদের জন্য এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি সেবা যার মাধ্যমে আপনারা আরো সহজে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বীমা সেবা নিতে পারেন।

বিমফাইতে আপনি সেরা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর স্বাস্থ্য বীমা পলিসি সমূহ একস্থানে পাবেন এবং তুলনা করে আপনার জন্য যথাযথ পলিসিটি বাছাই করে নিতে পারবেন। বর্তমানে আমাদের প্লাটফর্মে প্রগতি লাইফ, গ্রীন ডেল্টা, গার্ডিয়ান লাইফ, এবং চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির হেলথ ইনস্যুরেন্স পলিসিগুলো পাবেন। আমাদের গ্রাহক সেবা প্রতিনিধি সবসময় আপনাকে এই ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে যেন আপনি আপনার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে সেরা স্বাস্থ্য বীমা পলিসিটি বেছে নিতে পারেন। 

এছাড়াও আপনার যখন একটি বীমা দাবি উত্থাপন করতে হবে তখন আপনি বিমফাই এর মাধ্যমে খুব সহজে অনলাইনে আপনার দাবিটি উত্থাপন করতে পারবেন কোনো ঝামেলা ছাড়াই। আমাদের বীমা দাবি প্রক্রিয়াকরণ বিভাগ থেকে সকল ক্লেইমগুলো বীমা কোম্পানির কাছে প্রেরণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেগুলো নিস্পত্তি করার চেষ্টা করে। তাই আপনি থাকতে পারেন নিশ্চিন্ত কারণ বিমফাই এর মাধ্যমে বীমা দাবি পাওয়া এখন খুব সহজ।

;